top of page
Writer's pictureDipam Nath

করোনা চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপির ম্যাজিক

Updated: Oct 29, 2021

করোনা বা কোভিড- ১৯ নামটি বর্তমানে আর কারো অজানা নেই। বিগত বহু সময় ধরে আমাদের সুস্থ বিশ্বকে মৃত্যু মিছিল এর সম্মুখীন করে চলেছে এই ছোট্ট মারণ ভাইরাসটি। এটি এমন একটি রোগ যার এখনো অবধি কোনো প্রমাণিত ঔষধ আবিষ্কার হয়নি। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি এবং কোভিড ভ্যাকসিনের সাহায্যে এই রোগকে অনেকটা আটকানো সম্ভব হয়েছে, কিন্তু পুরোপুরি জয় করা যায়নি। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর একজন রোগীর জ্বর, শুকনো কাশি, মৃদু থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। বিভিন্ন চিকিৎসা গাইডলাইন অনুযায়ী করোনাভাইরাস দ্বারা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ৩৪ % রোগীদের অতিরিক্ত কফ শ্বাসতন্ত্রে জমা হয়, ১৯ % রোগীর মৃদু থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয় এবং ৫ % রোগীর ভেন্টিলেশন বা লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। সর্বোপরি বলা যেতে পারে করোনাভাইরাস মানুষের শরীরের শ্বাসতন্ত্রকে সবথেকে বেশি ক্ষতি করে। করোনা আক্রান্ত অবস্থায় এবং করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরবর্তী সময়ে সুস্থ জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়াতে ব্রম্ভাস্ত্র হিসেবে কাজ করছে "ফিজিওথেরাপি"। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চমৎকারভাবে রোগীদের ওপর কাজ করছে এবং তাদেরকে মৃত্যুর মুখ থেকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছে।


অক্সিজেন থেরাপির সাথে রেসপিরেটরি ফিজিওথেরাপি,পারস লিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ, রেসপিরেটরি মাসল ট্রেনিং এক্সারসাইজ দেওয়া হলে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা ও মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব। উন্নত দেশগুলোতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্ট কমাতে এবং বুকে জমে থাকা কফ বের করে তাদের সুস্থ করে তুলতে অভিজ্ঞ রেসপিরেটরি ফিজিওথেরাপি এর চিকিৎসকরা সাহায্য করছেন। এবং এতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীরা নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হতে পারে যার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবাহে সমস্যার সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এজন্য রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে হাই ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির পাশাপাশি CPAP (কনটিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার) এ রাখা হয়, এসব কিছু একজন রেসপিরেটরি ফিজিওথেরাপিস্টের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে করা হয়ে থাকে। রোগীর এয়ারওয়ে সচল রাখা এবং শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে রোগীকে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করানো এবং পোসচারাল ড্রেনেজ প্রক্রিয়াও ব্যাবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের একটিভ সাইকেল অব ব্রিদিং এক্সারসাইজ, পশ্চারাল ড্রেনেজ টেকনিক, ব্রিদিং কন্ট্রোলড এক্সারসাইজ, ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ—এই ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি একজন দক্ষ রেসপিরেটরি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োগ করে তাকে সুস্থ করে তুলছেন।


এবার আসা যাক তীব্রভাবে সংক্রমিত রোগীর ক্ষেত্রে যাকে আইসিইউ বা ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। ভেন্টিলেটর নাম শুনলেই অনেকের মনে ভয়ের উদ্রেক ঘটে যে রোগীকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে মানে তার অবস্থা এতটাই সংকটজনক যে হয়তো সে আর বেশিদিন নেই কিন্তু এই ধরনের চিন্তা-ধারা একেবারেই ভুল।

প্রথম দিন থেকে ভেন্টিলেটর ব্যবহারের আগের দিন পর্যন্ত রেসপিরেটরি ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরিসীম এবং ফল চমকপ্রদক। একটি রোগীকে যদি ভেন্টিলেটরে প্রবেশের আগেই অক্সিজেন থেরাপি, ব্রিদিং এক্সারসাইজ, ম্যানুয়াল থেরাপি যেমন ভাইব্রেশন, শেকিং, ক্ল্যাপিং ইত্যাদি, এবং পশ্চারাল ড্রেইনেজ করলে রেসপিরেটরি ট্রাক্ট এবং ফুসফুসের জমে থাকা মিউকাস অনেকটা পাতলা হয়ে যায় যেটা কাশির সাহায্যে অনেক সহজেই বের হয়ে আসে বাইরে। নার্সিং হোম বা হাসপাতাল এর মধ্যে চিকিৎসাধীন রোগীদের বিভিন্ন ব্রিদিং এক্সারসাইজের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াফ্রামাটিক ম্যানুয়াল টেকনিক, রেসপিরেটরি মাসল স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেন্দেনিং ইত্যাদি এক্সারসাইজ করিয়ে একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ফুসফুসের সব সম্ভাব্য জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারেন। রোগীকে নন–ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখা, মেকানিক্যাল ইনটুবেশনে কিংবা মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন পর্যন্ত ফিজিওথেরাপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।


ভেন্টিলেশন খোলার পর রোগীর রিকোভারি পর্যায়ে একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টই পারেন স্ট্র্যাচিং এক্সারসাইজ, প্যাসিভ রেঞ্জ অব মোসেন, বসা থেকে দাঁড়ানো, হাঁটানো ইত্যাদির মধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।

সিওপিডি, রেসপিরেটরি ফেলিওর, ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা ইত্যাদি শ্বাসতন্ত্র সম্পর্কিত রোগীদের ক্ষেত্রে ব্রিদিং টেকনিক, পারসলিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ, অ্যারোবিক এক্সারসাইজের ক্ষেত্রেও রেসপিরেটরি ফিজিওথেরাপিস্টদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধ থেকে প্রতিকার- সব পর্যায়েই রেসপিরেটরি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা রয়েছে।


বিশ্ব স্বাস্থ্য বিভাগের একজন অধ্যাপক, ডঃ মাইকেল ডি. ল্যান্ড্রি, যিনি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এবং আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের অধীনস্ত অর্থোপেডিক সার্জারি সম্প্রতি আমেরিকান ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত একটি অনলাইন টেলিকনফারেন্সে বলেছেন, "করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ের রোগীদের ক্ষেত্রে বর্তমানে ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন যেন তারা পুনরায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত না হন।"



সর্বোপরি বলা যায় করোনা মোকাবিলায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা এবং অবদান সত্যিই অনস্বীকার্য। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগের ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে একমাত্র আশার আলো দেখিয়ে রোগীকে সুস্থ জীবনের পথে ফিরিয়ে আনছে এই ফিজিওথেরাপি। সেই কারণেই বলা হয়ে থাকে- "A Physiotherapist Has The Brain Of A Scientist, The Heart Of A Humanist & The Hands Of An Artist."

227 views0 comments

Comments


  • Instagram
  • Facebook
  • LinkedIn
  • YouTube
bottom of page